একশ দিনের কাজের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে টাকা দিতে হবে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
বাংলার জনরব ডেস্ক : পশ্চিমবাংলার মানুষদের যে ১০০ দিনের কাজ থেকে বিজেপি সরকার বা মোদী সরকার বঞ্চিত করে চলেছে এই অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে করে আসছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিল বামেরা! সেই মামলাতে বলা হয়েছিল ১ আগস্ট থেকে পশ্চিমবাংলায় ১০০ দিনের কাজ শুরু করতে। কলকাতা হাইকোর্টের এই রায় কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল মোদি সরকার। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ কেন্দ্রের আবেদন খারিজ করে দেয়। কেন্দ্রের উদ্দেশে বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চের মন্তব্য, “আপনারা মামলা তুলে নেবেন, না কি আমরা খারিজ করব?” তার পরেই আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয়।
সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রের আবেদন খারিজ করে দেওয়ায় হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে ১০০ দিনের কাজের টাকা মঞ্জুর করতে হবে কেন্দ্রকে। তা ছাড়া এর ফলে ১০০ দিনের কাজ নিয়েও বাধা কাটল। চার বছর পরে ফের ১০০ দিনের কাজ শুরু হবে রাজ্যে। এই প্রসঙ্গে রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে কেন্দ্রের সরকার ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছিল। হাই কোর্ট আগেই এই বিষয়ে রায় দিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল কেন্দ্র। আজ মাত্র ৩০ সেকেন্ডে কেন্দ্রের আর্জি খারিজ করে দিয়েছেন বিচারপতিরা। মানুষও দেখল কারা সাধারণ মানুষের টাকা আটকে রেখেছে।”

২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিনের কাজের মজুরি দেওয়া হচ্ছে না, এই অভিযোগ তুলে হাই কোর্টে মামলা করেছিল পশ্চিমবঙ্গ খেতমজুর সমিতি। সোমবার ওই সংগঠনের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “কেন্দ্রের সরকার অন্যায় ভাবে এই প্রকল্পের টাকা বন্ধ রেখেছিল। আদালতের নির্দেশের ফলে গরিব মানুষ আবার কাজ পাবেন।”
রাজ্যে গত তিন বছর ধরে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে, যা নিয়ে সরব বাংলার শাসকদল তৃণমূল। কিন্তু এই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা কেন্দ্রীয় সরকার আটকে দিয়েছে। অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রের দেওয়া ১০০ দিনের কাজের টাকা নিয়ে বিস্তর দুর্নীতি হয়েছে। প্রকৃত সুবিধাভোগীদের বঞ্চিত করে ওই টাকা অন্যদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে। এই যুক্তিতেই এ রাজ্যে ১০০ দিনের কাজের বরাদ্দ টাকা আটকে রেখেছিল কেন্দ্র।
গত ১৮ জুন কলকাতা হাই কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায় দাসের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছিল, দুর্নীতি রুখতে রাজ্য সরকারকে যে কোনও শর্ত দিতে পারবে কেন্দ্র। তবে ১০০ দিনের কাজ আবার শুরু করতে হবে। সমগ্র প্রকল্পটিকে বন্ধ করে রাখা যাবে না। কেন্দ্রের উদ্দেশে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম বলেছিলেন, ‘‘এই সংক্রান্ত সমস্ত অভিযোগ ২০২২ সালের আগের। সেই সব নিয়ে আপনারা যা খুশি পদক্ষেপ করুন। কিন্তু এখন প্রকল্পের কাজ চালু করা হোক।’’ কাজ চালু সংক্রান্ত হাই কোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল কেন্দ্র। সোমবার কেন্দ্রের আবেদন খারিজ করে হাই কোর্টের নির্দেশ বহাল রাখার কথা জানিয়ে দিল শীর্ষ আদালত।

